কম্পিউটার প্রযুক্তিতে কোন প্রোগ্রাম বা রোবট কি নিজে নিজেই চিন্তা করতে পারে?

কম্পিউটার প্রযুক্তিতে কোন প্রোগ্রাম বা রোবট কি নিজে নিজেই চিন্তা করতে পারে? এর উত্তর পেতে হলে প্রথমেই জানতে হবে চিন্তা করা বলতে কি বোঝায়।

মেশিন যখন মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা দেখায় সেটিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কম্পিউটার-বিজ্ঞানের একটি অতি অগ্রসর অংশ হিসেবে এটি সম্ভব হয়েছে। কী কী রূপে এটি আসছে বা আসতে পারে তার কোন সীমা নেই- স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজ বুদ্ধিতে চলা যে কোনো যন্ত্র, নীতি নির্ধারণ করতে পারার মতো উচ্চতর কম্পিউটার, মানুষের মতো বা মানুষকে ছাড়িয়ে নানা কাজ করার মতো রোবট- ইত্যাদি নানা রূপে। মানুষের মতোই সে নিজের লক্ষ্য নিজে ঠিক করতে পারে। সে লক্ষ্যে সফল হওয়ার জন্য অবস্থা বুঝে যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। অবস্থা বোঝার জন্য সূক্ষ্ম সেন্সরের সাহায্যে (ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, স্পর্শ-সংবেদী যন্ত্র ইত্যাদি) সে তার পরিপার্শ্বিকতা অনুধাবন করতে পারে। আরো বড় কথা হলো যে বিপুল পরিমাণ তথ্য সে পাচ্ছে, যে অভিজ্ঞতা তার হচ্ছে, তার থেকে সে ক্রমাগত শিখতে পারে সেটিকেই বলে ‘মেশিন লার্নিং’। ওভাবে সে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিজের লক্ষ্যে পরিবর্তনও আনতে পারে। মানুষ-প্রোগ্রামার যেভাবে কম্পিউটারের জন্য প্রোগ্রাম করে দেয়, নিজে একটি প্রোগ্রামের মতো হয়েও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরো উন্নত প্রোগ্রাম নিজেই তৈরি করে নিতে পারে। অন্যদিকে ইংরেজি-বাংলার মতো আমাদের সাধারণ ভাষার ওপর নিজের দক্ষতা সে গড়ে নিতে পারে; মানুষের চেহারাসহ যে কোনো জটিল ইমেজ চিনতে, বুঝতে ও বিশ্লেষণ করতেও সক্ষম। অসম্ভব রকম বিশাল তথ্যভা-ার নিয়ে দ্রুত কাজ করতে পারে বলে তার বুদ্ধির চমকটাও বেশি। যত সূক্ষ্ম কাজ হোক, যত বুদ্ধির কাজ হোক, কিংবা পরিশ্রমের কাজ হোক, সব রকম কাজকে তার লক্ষ্যবস্তু করা যাচ্ছে। বৈজ্ঞানিক, গাণিতিক কিংবা ব্যবসা সংক্রান্ত গবেষণার কাজেও তারা মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে। ভুললে চলবে না যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জিনিসটিই একেবারে গণিতময়।



মনে রাখতে হবে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মানবিক বুদ্ধিমত্তা নয়। তাই ‘এই মেশিন কি চিন্তা করতে পারে?’ বা ‘এই মেশিন কি আমি যা করতে পারি তার সব করতে পারে?’ ‘এই মেশিনের কি আবেগ আছে ?’- এমন প্রশ্নের বদলে আমাদের প্রশ্নটি হওয়া উচিত ‘আবেগের বশবর্তী হয়ে আমরা যা করি আবেগ ঘটার মত কারণের ফলে এ মেশিনও কি তাই করতে পারে?’ উভয় ক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তা হলে বুদ্ধিমান মেশিনটিকে হেলাফেলা করার বা একে ‘ব্যাটা নেহাত মেশিন মাত্র’, বলে উড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে ধরনের কাজ এখনো বুদ্ধিমান মেশিনের জন্য দুরূহ তা হলো অন্যরা কীভাবে চিন্তা করছে সেটি আন্দাজ করতে পারা- যেটি মানুষ হরদম করছে। আবার এমন জবরদস্ত বুদ্ধিমান যে মেশিন অদ্ভুতভাবে সে খুবই সাধারণ কিছু ক্ষেত্রে এসে অপারগ হয়ে পড়ে। এর একটি হলো আমাদের চারপাশের যে স্থান তাতে কোন বস্তু কী পরিস্থিতিতে আছে সে সম্পর্কে মানুষ মাত্রেরই যে মোটা দাগের সহজাত ধারণা আছে, মেশিনের তা নেই। তাই একটি শিশুও বলতে পারে পানির গ্লাসটি টেবিলের কিনারায় খুব নাজুক অবস্থায় আছে, যেকোন মুহূর্তে পড়ে ভেঙে যেতে পারে; মেশিন তা বলতে পারবে না। তেমনি লোক-মনস্তত্ত্ব নিয়ে মানুষের একটি সহজাত ধারণা আছে। শিক্ষক ক্লাসে ঢুকলে ছাত্ররা চুপ হয়ে যায় কেন এটি মানুষ তাড়াতাড়ি বুঝবে, বুদ্ধিমান মেশিন সহজে বুঝবে না। এরকম কিছু কাজ ছাড়া মনে হচ্ছে বুদ্ধিমান মেশিন অন্য সব কাজ মানুষের চেয়ে ভাল করবে এবং সস্তায় করবে। বেশকিছু ক্ষেত্রে সেটি তারা ইতোমধ্যে করছেও। তবে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য সুনির্দিষ্ট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই তৈরি হচ্ছে ও ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু তার সবগুলো দক্ষতাকে একত্র করে একটি ক্ষমতার সঙ্গে অন্য ক্ষমতার আন্তঃক্রিয়ায় সে এমন বুদ্ধিমানে পরিণত হতে পারে যে ‘সার্বিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ নিয়ে নিজেই নিজের উন্নতি ঘটাতে, প্রতিলিপি তৈরি করতে এবং সামগ্রিক ভাবে মানুষের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবে।